ভুল চিকিৎসায় সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটায় দু’জন প্রসূতির মৃত্যুরঅভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) রাতে পাটকেলঘাটার লোক নাথ নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ওই ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া প্রসূতিরা হলেন, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিশখালী ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের আব্দুস সালামের স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন এবং একই উপজেলার গনেশপুর গ্রামের ফয়সাল হোসেনের স্ত্রী তাসলিমা বেগম। ভুক্তভোগীর স্বামী গনেশপুর গ্রামের ফয়সাল হোসেন বলেন, শুক্রবার দুপুরে স্ত্রীকে ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে সিজার করার পরে রাতে তার অবস্থার অবনতি হলে সাতক্ষীরার হার্ড ফাউন্ডেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এদিকে আরেক ভুক্তভোগীর স্বামী এনায়েতপুর গ্রামের আব্দুল ছালাম বলেন, স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠলে শুক্রবার সকালে পাটকেলঘাটার লোকনাথ ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সিজার করা হয়। রাত ১০টার দিকে স্ত্রীর অবস্থার অবনতি হলে তাকে সাতক্ষীরার হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্ত্রীর মৃত্যু হয়। তবে ময়নাতদন্ত ছাড়া স্ত্রীর দাফনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। ওই ক্লিনিকের সাবেক এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পুলক পাল বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে চটকদার বিজ্ঞাপন দেখিয়ে কম টাকায় চিকিৎসা করার কথা বলে তার ক্লিনিকে রোগী ভর্তি করায়। পরে অপচিকিৎসার নামে হাতিয়ে নেন হাজার হাজার টাকা। এছাড়া তার ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের অধিকাংশ করেন ওই ক্লিনিকের কিংকর নামে এক কর্মকর্তা। পরে অবস্থা বেগতিক হলে মৃত্যুর দায় এড়াতে তাদের পাঠানো হয় শহরের নামি দামী হাসপাতালে। তার অপচিকিৎসার স্বীকার হয়ে ইতিমধ্যে প্রসূতি মা শিশুসহ প্রায় ডজন খানেক মানুষের প্রাণহানী ঘটেছে।অভিযোগ অস্বীকার করে লোকনাথ নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক পুলক পাল জানান, বিষয়টি নিয়ে পরে কথা হবে। তবে ওই ক্লিনিকের এক কর্মচারী জানান, ডাক্তার শাহরিয়ার কবির ইমন এবং বরকত সিজার করেছেন। পরে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে তাদের আত্মীয়দের জানিয়ে হার্ট ফাউন্ডেশনে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাদের। সাতক্ষীরা হার্ট ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার দেবব্রত বলেন, মুমূর্ষ অবস্থায় আমাদের ক্লিনিকে ওই রোগীদের আনা হলে আমরা সাথে সাথেই আইসিইউতে স্থানান্তর করি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।এ বিষয়ে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রাজীব সরদার বলেন, খবর শোনা মাত্রই আমরা ঘটনা তদন্ত করার জন্য একটি তদন্ত টিম গঠন করেছি। আমি নিজেও আমার আরএমও খালিদ হাসান নয়নসহ কয়েকজন চিকিৎসক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ সময় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পাটকেলঘাটা লোকনাথ নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অপারেশন ও প্যাথলজিক্যাল সকল কাজ বন্ধের নির্দেশ প্রদান করেছি। পাটকেল থানার ওসি হাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আব্দুল সালাম বলেন, ঘটনাস্থলে তদন্ত করার জন্য তালা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। তিনি ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। দুই এক দিনের মধ্যে ওই ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হবে।