নিজস্ব প্রতিবেদক
আধুনিক বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতির গভীরে লুকিয়ে থাকা সংকট এবং আত্মপরিচয়ের টানাপোড়েন সাহসিকতার সঙ্গে বিশ্লেষণ করেছেন আহমদ ছফা তার বহুল আলোচিত বই "বাঙালি মুসলমানের মন"-এ। ১৯৮১ সালে প্রকাশিত এই বইটি সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা এক তাত্ত্বিক কাজ, যা আজও প্রাসঙ্গিক।
মূল বিষয়বস্তু:
ছফা বইটির প্রতিটি অধ্যায়ে তুলে ধরেছেন বাঙালি মুসলমানদের আত্মপরিচয়, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে উদ্ভূত সংকট। তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে বাঙালি মুসলমানরা তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শেকড় এবং ধর্মীয় আদর্শের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
ইতিহাস ও পরিচয়ের টানাপোড়েন:
ছফা বলেছেন, বাঙালি মুসলমানের মন বহুমাত্রিক দ্বন্দ্বে পূর্ণ। একদিকে বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি, অন্যদিকে মুসলমান পরিচয়ের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিধি। এই দ্বন্দ্ব তাদের চিন্তাধারায় একটি সংকীর্ণ মানসিকতার জন্ম দিয়েছে।
সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থা:
বইয়ে লেখক উল্লেখ করেছেন, কীভাবে বাঙালি মুসলমানদের পশ্চাৎপদ শিক্ষাব্যবস্থা এবং ধর্মীয় কুসংস্কার তাদের মুক্তবুদ্ধি চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এই অবস্থাকে ছফা বাঙালি মুসলমানদের 'পরাধীন মনের কথা' হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ছফার ভাষা ও দৃষ্টিভঙ্গি:
আহমদ ছফার লেখার ধরণ সবসময় সরাসরি ও নির্মোহ। তিনি তার মতামত প্রকাশে কখনো দ্বিধা করেননি। এই বইয়ে ছফা একদিকে যেমন বাঙালি মুসলমানদের ঐতিহাসিক শোষণের শিকার হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন, তেমনি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও চর্চার সীমাবদ্ধতাগুলোকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
বইটির প্রাসঙ্গিকতা:
প্রকাশের পর বইটি বুদ্ধিজীবী মহলে যেমন প্রশংসা পেয়েছে, তেমনি সমালোচনার মুখেও পড়েছে। তবু, "বাঙালি মুসলমানের মন" আজও একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ, যা বাঙালি মুসলমানদের আত্মপরিচয় এবং চিন্তার বিকাশে দিকনির্দেশনা দেয়।
বইটি আজকের প্রজন্মের জন্যও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। এটি কেবল ইতিহাস নয়, বরং ভবিষ্যতের পথ খোঁজার এক সাহসী প্রচেষ্টা।
লেখক: আহমদ ছফা
প্রকাশকাল: ১৯৮১
মূল প্রতিপাদ্য: বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয় ও মনস্তত্ত্ব।