লেখক : শাওন খন্দকার [ কবি- সাহিত্যিক এবং বিশ্লেষক ]
পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের পর আপসহীন বাঙালি মুসলিমরা ব্রিটিশদের দ্বারা শোষিত এবং নির্যাতিত হতে থাকে। ফলস্বরূপ শিক্ষা-দীক্ষা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে তৎকালীন মুসলিম সমাজ পিছিয়ে পড়ে। ইতিহাসের এমন এক ক্রান্তিকালে বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার পূর্ব বেতগাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ডা, মীর হোসেন। ডা, মীর হোসেনের বাবা মানিক উল্লাহ ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতীয় বিচার বিভাগের একজন সম্মানিত জুরি (আদালতে মামলার রায় প্রদানকারী ব্যক্তিবর্গ) এবং সমাজসেবক। ডা, মীর হোসেনের শৈশব, কৈশোর এবং প্রাথমিক শিক্ষা জীবন সিরাজগঞ্জে হলেও পরবর্তীতে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য কলকাতায় যান। কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে নিজের গ্রামে ফিরে আসেন এবং গ্রামের সাধারণ মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে শুরু করেন। ডা, মীর হোসেন পেশায় একজন ডাক্তার হলেও তিনি সাহিত্য চর্চা করতেন। তাঁর লেখা গল্প, কবিতা তৎকালীন বিভিন্ন সাহিত্য সাময়িকীতে প্রকাশিত হতো। তিনি সব সময় গ্রামের নিরক্ষর মানুষদের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করতেন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের শিক্ষার জন্য তিনি আলাদা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ডা, মীর হোসেন ছিলেন একজন স্বনামধন্য ডাক্তার এবং তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতীয় সরকারের বয়স্ক ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা কবি এবং লেখক। তাঁর মেজো ছেলে আশরাফ আলী খন্দকার ছিলেন একজন সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী এবং সাহিত্যপ্রেমী মানুষ। আশরাফ আলী খন্দকারের বড় ছেলে কে, এম, সিরাজুল ইসলাম একজন কবি- সাহিত্যিক এবং আদর্শ শিক্ষক। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মাসিক “শিশু” পত্রিকাসহ বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকায় তাঁর লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়েছে।
আমার প্র-পিতামহ,- “ডা, মীর হোসেন” এমন এক ব্যক্তি, সাহিত্য এবং শিক্ষা বিস্তারে যার অবদান অসামান্য। তাঁর জন্মস্থান পূর্ব বেতগাড়ী গ্রাম যমুনা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে কিন্তু তাঁর অবদান এখনো অবিস্মরণীয়।